পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘ছায়াতল’
তানিয়া, আরিফা, হানিফ, লামিয়া ও সাথী। ওদের বয়স আনুমানিক ৫ থেকে ১০ বছর। ওরা স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে কেউ হবে ডাক্তার, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার, কেউ হবে শিক্ষক। কিন্তু ভাগ্যের কারণে এই বয়সেই ওদের পরিবারের জন্যে রোজগার করতে হয়। নয়তো ঘরে থাকা ছোট ভাইবোনকে পাহারা দিয়ে রাখতে হয়, মা-বাবাকে কাজে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে। তাই লেখাপড়া শেখা ওদের হয়ে ওঠে না। এমনি বৈরী পরিবেশের পরেও ওরা আগ্রহী লেখাপড়া শিখতে। তাই সময় বের করে আসে বিনামূল্যের বিদ্যালয়ে। ওদের বিদ্যালয়ের নাম ‘ছায়াতল বিদ্যাপীঠ’।
ওই মুহূর্তে আমার সঙ্গে থাকা একটা নোটবুক ছিল, কলম ছিল, তা দিয়ে ওদের নাম লিখে দেখাচ্ছিলাম। ওদের একজনার নাম ছিল ‘রাকিব’। সে একবার ‘বাকিব’ লিখছিল, কখনো ‘রাকব’ লিখছিল। আর একটা বাচ্চার নাম ছিল ‘নদী’। সে কখনো ‘নদ’ লিখছিল কখনো ‘নীদ’ লিখছিল। তবে ওরা ভুলভাল লিখলেও শিখতে তাদের আগ্রহের কমতি ছিল না। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করলো। তারপর আমি ওদের ঝালমুড়ি কিনে খাওয়ালাম এবং বললাম, তোমরা কাল এ সময় এখানে এসো ‘আমি তোমাদের আবার শেখাবো’। পরের দিন ওরা ঠিকই আসলো এবং আরো ক’জন শিশুকে সঙ্গে আনলো। এভাবেই কখন যে ওদের শেখানোর কাজে জড়িয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি।
সে সময় কিছু মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ওই শ্যামলী মাঠে আসতো। ওরা আমার শেখানো দেখে বললো—‘ভাই আপনি একা একা কষ্ট করছেন, এভাবে তো পরিবর্তন সম্ভব নয়, আসেন আমরা সবাই মিলে কিছু একটা করি। আমরা একদিন সবাই বসে ঠিক করলাম একটা সংগঠন করি, সেটার ব্যানারে আমরা শিশুদের লেখাপড়া শেখাবো। যেই কথা, সেই কাজ, সংগঠন তৈরি হলে। যার নাম হলো ‘ছায়াতল বাংলাদেশ।’ এইভাবে শুরু হলো সংগঠন।
২০১৬ সালে আমরা পার্কেই পাটিতে বসে শিশুদের শেখাতাম। তখন ৩৫ জন শিশু ছিল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে ‘নীড়’ লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্থপতি মো. মোবাশ্বের হোসেন স্যার আসলেন আমাদের শিশুদের লেখাপড়া শেখানো দেখতে। তিনি বললেন, সামনে তো বর্ষাকাল, তোমাদের অফিস লাগবে। তোমরা একটা বাসা খোঁজ, ভাড়া আমি দিব। এখন আমরা বাচ্চাদের অফিসে পড়াই, আর নীড় লিমিটেড আমাদের অফিস ভাড়া দেয়। তবে মাঝে মাঝে আমরা পার্কের মাঠে শিশুদের খেলাধুলা, গান, মেডিক্যাল ক্যাম্প করি।
বি, এম সোহেল রানা বলেন, ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা আগে ছিল না। প্রথমে শুরু করেছিলাম আত্মতৃপ্তি থেকে। কিছুদিন পর শুধু আর আত্মতৃপ্তির জায়গা বিষয়টা রইলো না, সামাজিক দায়বদ্ধতা মনে হতে লাগলো। এখন আত্মতৃপ্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং শিশুদের স্বনির্ভর করার জন্য পরিকল্পনা আমাদের মধ্যে আছে। এরা যেন ৫ম বা ৮ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে একটা ভালো কিছু করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবান ও হূদয়বানদের যদি সহযোগিতা পাই তাহলে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে ওদের ভালো কোনো কাজে সম্পৃক্ত করে দেওয়ার বিষয়টি আমরা ভাবছি। এ ক্ষেত্রে সমাজের সবল শ্রেণি পেশার মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।